মোরাকাবা আত্মার রৌশন বৃদ্ধি করে
প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১০, ২০১৮, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ
জগৎসংসার থেকে কিছুটা সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে নির্জনে একান্তে বসাকে মোরাকাবা বলা হয়। এরশাদ হয়েছেÑ ‘(হে নবী!) অতঃপর যখন আপনি অবসর পাবেন, তখন আপনি (ইবাদতের) পরিশ্রমে লেগে যান এবং সম্পূর্ণভাবে আপন প্রভুর অভিমুখী হোন।’ (সূরা আলাম-নাশরাহ : ৭-৮)। জ্ঞানের জগতের একটি জাহের, অন্যটি বাতেন; তথা অদৃশ্য জগৎ, যা মানুষের লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকায়িত থাকে। জাহেরি জ্ঞান বাজারের বই পড়েও লাভ করা যায়। বাতেনি জ্ঞান যততত্র হাটবাজারে পাওয়া যায় না। এটা একাগ্রতার সঙ্গে তালাশ করে নিতে হয়। গুপ্ত বা বাতেনি রহস্যময় জগতের জ্ঞান খোঁজার মাধ্যম হলো মোরাকাবায় বসা। তথা ধ্যান করা।
এরশাদ হয়েছেÑ ‘নিঃসন্দেহে আসমান ও জমিনের (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (এ জ্ঞানবান লোক হলো তারা) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে মনে করে এবং আসমান ও জমিনের এ সৃষ্টি (নৈপুণ্য) সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে (এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বলে ওঠে), হে আমাদের রব, (সৃষ্টিজগৎ) এর কোনো কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখনি।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)। মোরাকাবা হলো গভীর চিন্তাভাবনা করার বিষয়। নিজের আত্মোপলব্ধির বিষয়। নিজেকে চেনার বিষয়। গবেষণার বিষয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছেÑ ‘তবে কি এরা কোরাআন সর্ম্পকে (কোনো রকম চিন্তা) গবেষণা করে না! নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।’ (সূরা মুহাম্মদ : ২৪)। অনুসন্ধানী মোমিনের আত্মার ক্ষুধা মেটে মোরাকাবায়। অনুসন্ধানী মোমিনরা সুযোগ পেলে দুই চোখ বন্ধ করে মোরাকাবায় বসে পড়েন। গুপ্ত নুরের জগতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ইবরাহিম (আ.) এর মনে প্রভু সম্পর্কে প্রশ্ন জাগার সঙ্গে সঙ্গে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) হেরা পাহাড়ের গুহায় পনেরো বছর ধ্যান করেছিলেন। মুসা (আ.) সিনাই পর্বতে ধ্যান করেছেন।
এরশাদ হয়েছেÑ ‘যিনি আপনাকে দেখতে থাকেন, যখন আপনি (নামাজে) দাঁড়ান এবং সিজদাকারীদের মাঝে আপনার ওঠাবসাও (তিনি প্রত্যক্ষ করেন)।’ (সূরা শুয়ারা : ১৮-১৯)। নিজের আত্মার রৌশন বৃদ্ধির জন্য মোরাকাবা করতে হয়। মোরাকাবায় আসনে বসলে আত্মায় পানি আসে। শরীরের ভেতরের লফিতাগুলো সবুজ গাসের মতো সতেজ হয়ে ওঠে। মোরাকাবা করলে নিজের মধ্যে স্রষ্টার উপস্থিতি অনুভব হয়। এরশাদ হয়েছেÑ ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন; তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ তার সবকিছুই দেখেন।’ (সূরা হাদিদ : ৪)। ‘নিশ্চয়ই আপনার প্রভু কড়া দৃষ্টি রাখছেন।’ (সূরা ফজর : ১৪)।
সৃষ্টিজুড়ে অনেক অজানা রহস্যের ভা-ার রয়েছে। প্রকৃতির মাঝে অনেক বিষয় রয়েছে, যার দিকে দৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টার কথা স্মরণ হয়ে যায়। সুতরাং সব ধরনের মোহ ত্যাগ করে, কিছু সময়ের জন্য নিজেকে স্রষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলে, সৃষ্টিকর্তার আলোকিত জগতের অনেক অজানা রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। আপন কলব স্রষ্টার নুরের পরশে আলোকিত হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক। আমিন।
Leave a Reply