মাদক পাচারের নূতন নূতন কৌশল
প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ
মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাইতেছে গত ৪ মে হইতে। বিভিন্ন অভিযানে এখন অবধি দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং প্রায় ৪০ হাজার গ্রেফতার হইয়াছেন। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদন হইতে জানা যাইতেছে, এইসকল অভিযানের পরও মাদক পাচার অব্যাহত রহিয়াছে নানা কৌশলে। বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে, কখনো ডাবে, কখনো ফলের গাড়িতে, সিকিউরিটি সার্ভিসের আড়ালে, কখনো-বা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর নেপথ্যে কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় আসিতেছে ইয়াবা। সমপ্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালাইয়া চায়ের পাতার গুঁড়োর মতো দেখিতে নতুন মাদক নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) জব্দ করিয়াছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। র্যাবের পক্ষ হইতে ইতোমধ্যে বলা হইয়াছে যে, ইয়াবা যাহাতে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকিতে না পারে সেইজন্য কক্সবাজার ও টেকনাফে র্যাবের দুইটি স্থায়ী ক্যাম্পের পাশাপাশি আরো পাঁচটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হইয়াছে। দেড় শত জনবল হইতে বাড়াইয়া র্যাবে প্রায় চার শত জনবলে উন্নীত করা হইয়াছে। ইহা ছাড়া র্যাবের ডগ স্কোয়াড টিম নিজস্ব দুইটি স্পিডবোট লইয়া নাফ নদীতে সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করিয়াছে। এত কিছুর পরও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রোর একজন উপ-পরিচালক স্বীকার করিয়াছেন যে, মাদক পাচার বন্ধ হয় নাই। যদিও ইহা আগের মতো আর প্রকাশ্যে নাই।
মাদকের বিরুদ্ধে এতসব অভিযান, এত ধরনের প্রচার-প্রচারণার পরও কেন ইহাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভবপর হইতেছে না—তাহার মূল কারণ হইল—চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। সুতরাং “মাদককে ‘না’ বলুন” স্লোগানে চারিদিক মুখরিত করিলেও মাদকের স্রোত অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো বহিতেই থাকিবে। বর্তমানে বাংলাদেশে নানান হাত বদলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাহাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান খাত হিসাবে গড়িয়া তুলিয়াছে এই মাদক-ব্যবসা। জানা গিয়াছে, কেবল ইয়াবা বড়ির জন্যই মাদকসেবীরা বত্সরে খরচ করিয়া থাকেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা! কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, ৫০ টাকার মাদক আনিয়া যদি ৫০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে এই ব্যবসা কেন ছাড়িবে মাদক ব্যবসায়ীরা? কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী যদি মনে করেন এই ব্যবসা করিলে তাহার জীবন বিপন্ন হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে—তাহা হইলেই তিনি জীবন রক্ষার স্বার্থে এই ব্যবসা ছাড়িতে বাধ্য হইবেন।
মাদকের উত্সমুখ কিংবা মাদক ছড়াইয়া পড়িবার নেটওয়ার্ক যদি আটকাইয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলেই কেবল মাদকের প্রবাহ হ্রাস পাইতে পারে। মনে রাখিতে হইবে যে, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই মাদকের বিষবায়ু হইতে মুক্ত নহে। বিশ্বের অনেক সচেতন রাষ্ট্র তাহার তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক হইতে রক্ষা করিতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করিয়া থাকে। আমরা মনে করি, সরকারের শীর্ষপর্যায়ের দৃঢ় অবস্থান ও নির্দেশিত পদক্ষেপের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের নূতন নূতন কৌশলও একসময় পরাস্ত হইবে।
Leave a Reply