পাকিস্তানে নির্বাচনের বিচারিক ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী
প্রকাশিতঃ জুলাই ২১, ২০১৮, ৮:৫৮ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করার এক দিন পরই তাদের নির্বাচন চলাকালে ভোটকেন্দ্রের বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওই ক্ষমতা প্রদান নিয়ে রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ থাকার পরও বিরল এই সিদ্ধান্ত নিল কমিশন।
রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, নির্বাচনে আইনভঙ্গকারী যে কাউকে আটকের পর সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলেই বিচার করে দণ্ড দিতে পারবেন—এমন নির্দেশ জারি করে চলতি মাসে নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
দেশটির স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে এ উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। তারা মনে করে, সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। হায়দার ইমতিয়াজ নামের এক আইনজীবী বলেন, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সাবকে ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
পাকিস্তানের জনগণ আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদলের আশা করছেন। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা, গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
দেশটিতে বর্তমান দুই আলোচিত নাম নওয়াজ ও সেনাবাহিনী। বিভিন্ন সময় একে অপরের বিরুদ্ধে তারা সমালোচনায় মত্ত। নওয়াজ আসন্ন নির্বাচনে পিএমএল-এনের প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্যও সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। জেনারেলদের বিরুদ্ধে নওয়াজ শুধু অভিযোগই করেননি, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।
ডন অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সিনেট স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ইন্টেরিয়রের বিশেষ সেশনে আসিফ গফুর বলেন, ‘সেনা সদস্যরা কেবল নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসরণ করবে। কিছু গুজব আছে যে সেনাবাহিনী কিছু ব্যতিক্রম নির্দেশ জারি করেছে, কিন্তু তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগসূত্র নেই। আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কাজ করি।’
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৭১ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৩ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সেনা সদস্যদের তিন গুণ।
১৯৪৭ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর কয়েকবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। এবং প্রায় অর্ধশতাব্দী তারা সরাসরি শাসন করেছে।
Leave a Reply